
শান্তিরবাজার : রক্তাক্ত সেই দিনের স্মৃতি আজও অমলিন। ২০০০ সালের ৩১শে আগস্ট, উগ্রপন্থীদের নির্মম আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন বা DYFI-এর তৎকালীন রাজ্য সহ-সভাপতি, লড়াকু যুবনেতা কমরেড তপন চক্রবর্তী। তাঁর সেই আত্মবলিদানের ২৫তম বর্ষ পূর্তিতে শ্রদ্ধা, সংগ্রাম এবং নতুন করে শপথ গ্রহণের আবহে এক হল সভার আয়োজন করল DYFI শান্তিরবাজার বিভাগীয় কমিটি।
রবিবার, শান্তিরবাজারের এই হল সভাটি শুধুমাত্র একটি স্মরণ সভা ছিল না, বরং এটি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এক জোরালো রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছে। এবারের সভার মূল স্লোগান ছিল— “প্রতিহত করো সাম্প্রদায় দায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি, শক্তিশালী করো শিক্ষা ও কাজের লড়াই”। এই স্লোগানকে সামনে রেখেই সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। কমরেড অনুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় অতীত ও বর্তমান নেতৃত্বের বক্তব্যে বারবার উঠে আসে তপন চক্রবর্তীর নির্ভীক সংগ্রাম এবং তাঁর আদর্শের প্রাসঙ্গিকতার কথা।
সভার শুরুতে কমরেড তপন চক্রবর্তী সহ সমস্ত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এরপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংগঠনের বিভাগীয় সম্পাদক, কমরেড লক্ষণ দেবনাথ বলেন, “কমরেড তপন চক্রবর্তীকে হত্যা করে উগ্রবাদীরা ভেবেছিল তারা গণতন্ত্রের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু ২৫ বছর পরেও তাঁর আদর্শ আমাদের শিরায় শিরায় প্রবাহিত। আজ যখন পুনরায় সাম্প্রদায়িক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, যখন শিক্ষা এবং কাজের অধিকার থেকে যুব সমাজকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত চলছে, তখন তপন চক্রবর্তীর দেখানো পথেই আমাদের লড়াইকে আরও তীব্র করতে হবে।” তিনি এলাকার যুব সমাজকে সংগঠনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
এই সভায় অন্যতম প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক এবং রাজ্যের পরিচিত বামপন্থী নেতা কমরেড অমল চক্রবর্তী। তিনি তাঁর বক্তব্যে অতীতের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “তপন চক্রবর্তী ছিলেন এক অদম্য সাহসী সৈনিক। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি সংগঠনের কাজ থেকে এক চুলও বিচ্যুত হননি। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়েছে যে আদর্শের জন্য লড়াইয়ে কোনো আপোষ চলে না।” তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, “যে সাম্প্রদায়িক এবং বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে তপন লড়েছিলেন, সেই রাজনীতিই আজ ভিন্ন রূপে আমাদের সামনে আসছে। এর বিরুদ্ধে আদর্শগত লড়াইয়ের পাশাপাশি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মতো মানুষের মৌলিক দাবিদাওয়া নিয়ে পথে নামতে হবে। এটাই হবে তপন চক্রবর্তীর প্রতি শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধা।”
সভাপতির ভাষণে কমরেড অনুব্রত চৌধুরী সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই স্মরণ সভা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে আগামী দিনে সাম্প্রদায়িকতা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে এক বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সব মিলিয়ে, এই হল সভাটি ছিল শহীদদের স্মরণ এবং বর্তমান প্রজন্মের জন্য এক সুস্পষ্ট দিকনির্দেশ।