
তেলিয়ামুড়া, ত্রিপুরা । ১০ আগস্ট । রিপোর্ট- হিরণময় রায়ঃ ত্রিপুরার তেলিয়ামুড়া মহকুমার চাকমাঘাট এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা গোটা রাজ্যকে আলোড়িত করে তুলেছে। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এক তরুণ ট্রাকচালক – মিহির লাল দেবনাথ – ছয় থেকে সাত ঘন্টা ধরে বাঁচার জন্য কাতর প্রার্থনা করেছেন। তাঁর অসহায় আবেদন, আর্তনাদ— সবই এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। তবে এই মৃত্যুর পেছনে শুধুই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং মানবিক ব্যর্থতার করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসীরা বলছেন— মিহির কেবল সাহায্য চাইছিলেন, প্রশাসনের দিকে চেয়েছিলেন একটিবার সহানুভূতির জন্য। দুর্যোগ মোকাবেলা বিভাগের ভূমিকা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠছে। সেই সময় দায়িত্বে থাকা মহকুমা দুর্যোগ মোকাবেলা আধিকারিক অমিত রায় চৌধুরী-র ভূমিকা ঘিরে একের পর এক সন্দেহ, প্রশ্ন আর চাপা ক্ষোভ রয়ে গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ঘটনার দিন, যেখানে একজন মানুষ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন, সেখানে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের মোবাইল বন্ধ থাকা, ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থাকা, এমনকি পরদিন সকালে অন্য এক কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা— এই সবকিছুই জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এটা কেবল অবহেলা নয়— বরং দায়িত্বহীনতার চূড়ান্ত নিদর্শন।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলা হয়েছে। অধিকাংশ সাক্ষী সরাসরি দুর্যোগ মোকাবেলা বিভাগের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়— এই ব্যর্থতার জবাবদিহি কে করবে?
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে ও সংবাদমাধ্যমে যে অভিযোগগুলো উঠে এসেছে, তা দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। নানা মহলে গুঞ্জন— অমিত রায় চৌধুরী’কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আড়াল করা হচ্ছে, যাতে তাঁকে শাস্তির মুখোমুখি হতে না হয়। সাধারণ জনগণের একাংশ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, হয়তো বা এটি আরেকটি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবস্থাপনার নিচে চাপা পড়ে যাওয়া মৃত্যু’ হিসেবেই পরিগণিত হবে।
সচেতন মানুষের প্রশ্ন— কাঁদবে না তো বিচারের বাণী?
এমনকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং একাধিক বিশিষ্টজনও এই ঘটনার উপর শোক প্রকাশ করেছেন। রাজ্যের আনাচে কানাচে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন একটিই প্রশ্ন—
“বিচারের বাণী এবারও কি নীরবে নিভৃতে কাঁদবে?”
জনগণ এখন দাবি করছেন, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কেউই যেন আইনের ঊর্ধ্বে না থাকেন।
যিনি দায়িত্বে থাকবেন, তিনি যদি দায়িত্ব পালন না করেন— তাহলে সেই অবহেলা যে কারও জীবন কেড়ে নিতে পারে, তার বড় উদাহরণ মিহিরের করুণ মৃত্যু।
এখন সময় এসেছে, অমিত রায় চৌধুরী কিংবা অন্য যেই হোক না কেন, তাদেরকে আইনি কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর। তদন্ত যেন হয় নিরপেক্ষ, দ্রুত এবং স্বচ্ছ। কারণ, একটি প্রাণের আর্তনাদ কেবল ভিডিওতে রয়ে গেলে চলবে না; তার জবাব চাই, জবাবদিহি চাই। এই মৃত্যুর বিচার না হলে— ভবিষ্যতের মিহিররাও শুধুই কাঁদবে, আর প্রশাসন নিশ্চুপ থাকবে।