
তেলিয়ামুড়া প্রতিনিধি: শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর আনাগোনা আর কাশের দোলা জানান দিচ্ছে, উমা আসছে। আর এই আগমনী বার্তা’কে সঙ্গী করে উৎসবের রঙে রঙিন হতে শুরু করেছে ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া। বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এলাকার সব শ্রেণীর মানুষকে সার্বজনীন ধর্মীয় আনন্দের জোয়ারে ভাসাতে প্রতিবারের মতোই উদ্যোগী হয়েছে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রতিষ্ঠান ‘তেলিয়ামুড়া প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ ক্লাব’। তবে এ বছরের আয়োজন ছাপিয়ে যেতে চলেছে বিগত সমস্ত বছরের জাঁকজমককে, কারণ ক্লাব এবার পা রাখছে তাদের দুর্গাপূজার ৫০তম বর্ষে, অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তীতে।
এই মহাযজ্ঞের শুভ সূচনা করতে বুধবার তেলিয়ামুড়া দ্বাদশ শ্রেণীর বিদ্যালয়ের সুবিশাল মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছিল এক বর্ণাঢ্য খুঁটি পূজা অনুষ্ঠানের। সম্পূর্ণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি মেনে, পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে পোঁতা হয় পূজার পবিত্র খুঁটি। এই মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে ক্লাবের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। সকলের চোখেমুখে ছিল এক অনাবিল আনন্দের ছাপ। গোটা তেলিয়ামুড়া শহরের প্রতিটি নাগরিকের শান্তি, সম্প্রীতি ও সার্বিক মঙ্গল কামনাই ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল প্রার্থনা।
পূজার উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে এবারের আয়োজনে থাকছে একের পর এক চমক। এ বছরের পূজার জন্য প্রাথমিক বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ২১ লক্ষ টাকা, যা তেলিয়ামুড়ার পূজার ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ বাজেট হতে চলেছে। মণ্ডপ সজ্জায় থাকছে বিশেষ আকর্ষণ। পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা এবং সুনামধন্য শিল্পীদের নিপুণ হাতে ইতালির কোনো এক রাজপ্রাসাদের আদলে গড়ে উঠবে এই মণ্ডপ। দর্শনার্থীরা তেলিয়ামুড়ার মাটিতে দাঁড়িয়েই যাতে ইউরোপীয় স্থাপত্যের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই এই পরিকল্পনা। শুধু তাই নয়, অত্যাধুনিক লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে পূজার প্রতিটি মুহূর্ত এবং মণ্ডপের প্রতিটি কারুকার্যকে দর্শনীয়ভাবে ফুটিয়ে তোলা হবে, যা এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তেলিয়ামুড়া প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ ক্লাবের পরিচিতি শুধুমাত্র জাঁকজমকপূর্ণ পূজার আয়োজক হিসেবেই নয়, বরং একটি সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও। তাদের এই সুখ্যাতিকে বজায় রেখে পূজার দিনগুলোতেও একাধিক সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে পূজা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, রক্তদান শিবির এবং অন্নভোগ বিতরণের মতো একাধিক জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী হাতে নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, এই ক্লাবটি সারাবছর ধরেই বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে, যা তাদের একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে।
সব মিলিয়ে ধর্ম, শিল্পকলা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার এক অনবদ্য মেলবন্ধন ঘটাতে চলেছে তেলিয়ামুড়া প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ ক্লাবের এই সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের দুর্গাপূজা। ইতিমধ্যেই এই বিশাল আয়োজনকে ঘিরে তেলিয়ামুড়া বাসীর মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা তুঙ্গে। এখন শুধু মায়ের আগমনের অপেক্ষা।