
তেলিয়ামুড়া (ত্রিপুরা), ২১শে আগস্ট, ২০২৫: পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী থাকল তেলিয়ামুড়া মহকুমার মোহরছড়ার লালটিলা গ্রাম। গ্রামের এক প্রভাবশালী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, নিখিল চন্দ্র দাস, তার নিজের ছোট ভাই দিলীপ দাসের একমাত্র আয়ের উৎস, একটি চায়ের দোকান, দলবল নিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে এবং প্রাক্তন শিক্ষকের এমন অমানবিক আচরণে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগী দিলীপ দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তিনি বহু বছর ধরে এই ছোট চায়ের দোকানটি চালিয়েই তার সংসার প্রতিপালন করে আসছেন। তার বড় ভাই, নিখিল চন্দ্র দাস, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং যার পুত্র একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক, বেশ কিছুদিন ধরেই পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন। দিলীপ বাবুর অভিযোগ, বড় ভাই চাইছিলেন তিনি যেন দোকানটি তুলে দেন এবং জমিটি তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু এই দোকানটিই তার এবং তার পরিবারের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল হওয়ায় তিনি তাতে রাজি হননি।
অভিযোগ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে দিলীপ দাস যখন দোকানে অনুপস্থিত ছিলেন, সেই সুযোগে নিখিল চন্দ্র দাস একদল লোক নিয়ে এসে তার চায়ের স্টলটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। দোকানের ভিতরে থাকা সমস্ত আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রীও নষ্ট করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে দিলীপ দাস ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেখেন তার স্বপ্নের দোকানটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পর, অসহায় দিলীপ দাস তেলিয়ামুড়া থানায় তার বড় ভাই নিখিল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার তদন্ত করছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে মোহরছড়ার লালটিলা গ্রামে। গ্রামের বাসিন্দারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের মতে, সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে বিবাদ থাকতেই পারে, কিন্তু তার জেরে একজন গরিব মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস এভাবে ধ্বংস করে দেওয়া কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিশেষ করে, একজন শিক্ষক, যিনি সমাজের পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত, তার কাছ থেকে এমন আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক। এই ঘটনায় অভিযুক্ত নিখিল চন্দ্র দাসের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।