
তেলিয়ামুড়া , ত্রিপুরা । ৮ আগস্ট ২০২৫ :- গত দুই-তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণে তেলিয়ামুড়া কৃষি নিয়ন্ত্রিত পাইকারি সবজি বাজার কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির ফলে পুরো বাজার চত্বর জল-কাদা মাখামাখি হয়ে পড়ায়, নাজেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয় ক্রেতা-বিক্রেতা সকলের মধ্যেই। বাজারের এমন দুরবস্থা নিয়ে এবার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কৃষকরা।
প্রতিদিনের মতো আজও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি ও কৃষিজাত পণ্য নিয়ে আসেন তেলিয়ামুড়া সবজি বাজারে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ক্রেতারাও যথারীতি বাজারে উপস্থিত হন। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই শুরু হয় বিপত্তি—বাজার প্রাঙ্গণে হাঁটু সমান কাদা ও জমে থাকা জল। ফলে কৃষকদের আনা বহু সবজি, যেমন পটল, বেগুন, টমেটো, কুমড়ো ইত্যাদি জল-কাদায় ভিজে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।
কৃষকদের অভিযোগ, বাজারের এমন অগোছালো পরিবেশ এবং অব্যবস্থাপনার কারণে তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অনেক কৃষক তাঁদের পণ্য ফেলে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যা একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতি, অন্যদিকে মানসিক আঘাতও। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে তখন, যখন দেখা যায় বাজার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কৃষি দপ্তর এবং বাজার কমিটির কেউ ঘটনাস্থলে নেই।
উপায়ান্তর না দেখে এবং বহুদিনের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে, কৃষকরা রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাজার পরিচালনা কমিটির অধীনস্থ ‘এগ্রি প্রডিউস অফিস’ তালা বন্ধ করে দেন। এই সময় বাজার চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এবং কর্মচারীরা আতঙ্কে ছিলেন।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কৃষি তত্ত্বাবধায়ক সহ কৃষি দপ্তরের একাধিক আধিকারিক। তারা কৃষকদের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। আধিকারিকরা জানান, নতুন আধুনিক বাজার শেড নির্মাণ কাজ চলমান, এবং শীঘ্রই একটি বিকল্প বিক্রয় প্রাঙ্গণের ব্যবস্থা করা হবে।
তবে কৃষকদের বক্তব্য আরও স্পষ্ট। তারা জানান, শুধু ভবিষ্যতের আশ্বাসে আর বিশ্বাস নেই। তারা বহুবার এই সমস্যা তুলে ধরেছেন, কিন্তু কার্যত কোনো স্থায়ী সমাধান আজও হয়নি। অনেক কৃষক ক্ষোভের সুরে জানিয়েছেন, “যদি বিকল্প ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে আগামী দিন থেকে জাতীয় সড়কের ধারে খোলা জায়গাতেই বাজার বসবে। প্রশাসন পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করুক।”
শেষপর্যন্ত আধিকারিকদের মধ্যস্থতায় তালা খোলা হয় এগ্রি প্রডিউস অফিসের এবং পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে বিক্ষোভ শেষ হলেও কৃষকদের ক্ষোভ এখনো রয়েই গেছে। সকলের নজর এখন একটাই—আগামী দিনে বাজার কমিটি এবং কৃষি দপ্তর আদৌ কোনো বাস্তবমুখী ও কৃষকবান্ধব পদক্ষেপ নেয় কিনা।