শোকের ছায়ায় ডুবে গেছে সমগ্র গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে অজয় দেবনাথ একটি বাড়ির জায়গার কাজ করতে গিয়েছিলেন। কাজ চলাকালীন অসাবধানতাবশত তিনি উপর থেকে মাটিতে ঝুলন্ত বিদ্যুৎ পরিবাহীর তারের সংস্পর্শে আসেন এবং ঘটনাস্থলেই গুরুতরভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিলেও শেষ রক্ষা হলো না। বিদ্যুৎ গাফিলতিই এই মৃত্যুর মূল কারণ। এই ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে গ্রামবাসী। কল্যাণপুর বিদ্যুৎ অফিসে ঘেরাও ও বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। এতে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ উভয় পক্ষেই কয়েকজন আহত হন। আজ বুধবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনার পর তেলিয়ামুড়া মহকুমা শাসক অপূর্ব কৃষ্ণ চক্রবর্তী, স্থানীয় নেতৃত্ব এবং বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মৃত অজয় দেবনাথের বাসভবনে পৌঁছান কল্যাণপুর–প্রমোদনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী। বিধায়ককে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবার-পরিজনরা। শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে বিধায়ক বলেন, “এই ঘটনা সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমি এবং সরকার, উভয়েই পরিবারের পাশে রয়েছি। মাননীয় মন্ত্রী রতন লাল নাথও বিষয়টি জানেন এবং যা যা সরকারি সুবিধা রয়েছে, তা পরিবারকে পৌঁছে দেওয়া হবে। অজয় আমার পরিচিত মানুষ ছিলেন, এই মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন।” এর পাশাপাশি বিধায়ক ঘটনাস্থলেও পরিদর্শন করেন — যেখানে অজয় দেবনাথ বিদ্যুৎ পরিবাহীর তারে স্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তিনি নিজে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ওই স্থানের বিদ্যুৎ সংযোগ ও তারের ঝুঁকি নিরসনে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। বিধায়ক জানান, আগামী দীপাবলির দিন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী নিজে মৃত অজয়ের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ত্রুটি-ত্রুটিগুলো খতিয়ে দেখবেন। পাশাপাশি, এই ঘটনায় বিদ্যুৎ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও প্রয়োজনে সাসপেনশনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলেও আশ্বাস দেন। তবে, এই পরিদর্শনের সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তেলিয়ামুড়া মহকুমা শাসক অপূর্ব কৃষ্ণ চক্রবর্তীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাংবাদিকরা বিদ্যুৎ দপ্তরের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাওয়ার আগেই তিনি সরাসরি তা আটকান এবং বলেন, “শুধু TCECL নিয়ে কথা বলার জন্য সাংবাদিকদের শিক্ষা দেন মহকুমা শাসক, বিধায়কের উপস্থিতিতে এমন কথা বলার মধ্য দিয়ে হঠাৎই সাংবাদিকদের শিক্ষা দিতে শুরু করেন। যা সকলের মধ্যেই প্রশ্নের চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে?” এমনকি, মহকুমা শাসকের প্রশ্ন নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা দপ্তরকে বাঁচানোর মন্তব্যে এমন মন্তব্যের বিরোধীরা করেন। এই ঘটনায় এলাকায় একদিকে যেমন গভীর শোক, তেমনি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মানুষের একটাই দাবি— “বিদ্যুৎ দপ্তরের গাফিলতিতে যে তরুণ প্রাণ হারাল, তার ন্যায়বিচার চাই।” এখন নজর রাজ্য প্রশাসনের দিকে—এই মৃত্যুর দায়ে আসলেই কি কেউ জবাবদিহি করবে?
