
তেলিয়ামুড়া । ১৬ জুলাই । রিপোর্ট; হিরণময় রায়ঃ রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবা, স্মার্ট মিটার এবং বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল ইস্যুকে ঘিরে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে জনমনে। আর সেই অসন্তোষকে হাতিয়ার করেই একের পর এক আন্দোলনের মাধ্যমে শাসক সরকারের বিদ্যুৎ নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে শুরু করেছে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল। গোটা ত্রিপুরা জুড়ে চলমান এই বিদ্যুৎ সংক্রান্ত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ তেলিয়ামুড়াতেও দেখা গেলো তৎপরতা।
আজ, মঙ্গলবার, তেলিয়ামুড়া মহকুমা সিপিআইএম কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত হয় এক প্রতিবাদ মিছিল, পথসভা ও ডেপুটেশন কর্মসূচি। স্মার্ট মিটার লাগানো, বর্ধিত বিদ্যুৎ বিলের অস্বচ্ছ হিসাব ও বিদ্যুৎ সংযোগ সংক্রান্ত দুর্ভোগের বিরুদ্ধে আজকের কর্মসূচির মূল প্রতিপাদ্য ছিল।
সিপিআইএম কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে এক বিক্ষোভ মিছিল তেলিয়ামুড়া শহরের প্রধান প্রধান পথ পরিক্রমা করে এবং শেষে ওম্পি চৌমুহনী এলাকায় এক পথসভায় পরিণত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম-এর মহকুমা সম্পাদক সুভাষ নাথ, প্রাক্তন বিধায়ক ও রাজ্য নেতা মনিন্দ্র চন্দ্র দাস, প্রবীণ নেতা হেমন্ত কুমার জমাতিয়া, নারী নেত্রী গায়ত্রী দত্ত, অরুণ দেববর্মা, ধনঞ্জয় দেববর্মা সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বক্তারা রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের কাজকর্ম এবং বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিগত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে চলছে। স্মার্ট মিটার বসানোর নামে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপানো হচ্ছে। বিলের অস্বচ্ছতা, অতিরিক্ত চার্জ, ঘনঘন লোডশেডিং ও নতুন সংযোগ পেতে দীর্ঘ বিলম্ব — সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা এখন এক যন্ত্রণার নাম।
বাম নেতারা দাবি করেন, বিদ্যুৎ বিল নিয়ে প্রতিদিন রাজ্যের বহু মানুষ সমস্যার মুখে পড়ছেন। অথচ সরকারের তরফ থেকে কোনও স্পষ্ট নীতি বা কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নেতারা স্মার্ট মিটার প্রকল্প বন্ধ করার দাবি জানান এবং বিদ্যুৎ সংক্রান্ত পরিষেবাগুলিকে আরও জনবান্ধব ও স্বচ্ছ করার আহ্বান জানান।
পথসভা শেষে সিপিআইএম প্রতিনিধিদল তেলিয়ামুড়া বিদ্যুৎ বিভাগে পৌঁছে ডেপুটেশন পেশ করেন। সেখানে তাঁরা লিখিতভাবে বেশ কয়েকটি দাবি দাখিল করেন — যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিদ্যুৎ বিলের পর্যালোচনা, স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ, বিদ্যুৎ লাইন সংস্কারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং নতুন সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব মানুষ মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন, তাদের সমস্যা অবিলম্বে সমাধানের দাবি।
এই কর্মসূচি ঘিরে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই জানান, তাঁরা এই সমস্যার ভুক্তভোগী এবং এমন আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকার হয়তো মানুষের কথায় মনোযোগ দিতে বাধ্য হবে।
এদিনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আর উপেক্ষা করা যাবে না — সরকার যদি সচেতন না হয়, তাহলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সিপিআইএম নেতারা।