
তেলিয়ামুড়া প্রতিনিধি: সভ্য সমাজে আবারো রচিত হলো এক লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। সোমবার সন্ধ্যা রাতে ঘটে গেল এক নারকীয় ঘটনা, যা তেলিয়ামুড়া থানার অধীনস্থ চাকমাঘাটের তুইমধু এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ উঠেছে, পাড়ার দোকানে যাবার পথে ১৭ বছর বয়সী এক নাবালিকা কন্যাকে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী লিচুবাগানের জঙ্গলে গণধর্ষণ করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে তেলিয়ামুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ জয়ন্ত কুমার দে জানান, মেলাপাথর গ্রামে বসবাসকারী হিরন মিয়া নামে এক যুবক এবং তার সহযোগী তুইমধু গ্রামের অন্তর মিয়া মিলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটায়। অভিযোগ, তারা একটি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল এবং সুযোগ বুঝে পাড়ার দোকানে যাচ্ছিল সেই নাবালিকাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে পার্শ্ববর্তী লিচুবাগানে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে।
ঠিক সেই সময়, সরোজ দেববর্মা নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি তার গৃহপালিত গরু খুঁজতে ওই জঙ্গলে প্রবেশ করেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাও ছিলেন। হঠাৎ তারা শুনতে পান এক কিশোরীর করুণ চিৎকার। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান, উলঙ্গ অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে সেই নাবালিকা। এরপর স্থানীয়রা বুঝতে পারেন, ভয়াবহ কিছু ঘটে গেছে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই স্থানীয়রা দেখতে পান অভিযুক্ত দুই যুবক চম্পট দিচ্ছে। অবস্থা বুঝে তারা তৎক্ষণাৎ নাবালিকাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান এবং বিস্তারিত বিবরণ সহ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে এবং ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা রুজু করে। মামলার নম্বর TLM P.S 66/2025।
তবে অভিযুক্তদের ধরতে গেলে, তারা আগেই পুলিশের তৎপরতার আঁচ পেয়ে গা-ঢাকা দেয়। ওসি জয়ন্ত কুমার দে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের খোঁজে তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই জোর তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে এবং খুব শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই জঘন্য ও নৃশংস ঘটনার পর তেলিয়ামুড়া তথা আশপাশের এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন মহল থেকে ধিক্কার এবং ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। সমাজে বারবার এই ধরণের অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় অভিভাবক মহলে উদ্বেগ বেড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন যদি এলাকায় নিয়মিত টহল দিত এবং অভিযুক্তদের আগেও নজরবন্দী করত, তাহলে হয়তো এই ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো। এখন পুলিশের প্রতি একটাই দাবি—অতি দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করে কড়া শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও মেয়েকে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হতে হয়।
এ ঘটনা একবার আবারো প্রমাণ করে দেয়, সমাজে এখনও কতটা অন্ধকার ছায়া রয়ে গেছে—যেখানে নারী এবং কন্যাশিশুর নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখে।